আল্লাহর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে কি আমেরিকা নিজেকে নিয়ে গেছে??ফেরাউন কি ফিরে এসেছে??
_____অরন্য হাসান দেলোয়ার।
আসুন বিশ্লেষণ করে দেখা যাক।
ইরাক থেকে শুরু করে সিরিয়া লিবিয়া আফগান ফিলিস্তিন সহ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ আমেরিকার দ্বারা ধ্বংস প্রাপ্ত হয়ে গেছে।
এটা বাস্তব সত্য। আপনি যদি মুসলমানদের প্রশ্ন করেন যে,আমেরিকা কি মুসলমানদের বন্ধু না শত্রু? উত্তর পাবেন মিশ্র। কেউ শত্রু বলবে,কেউ বন্ধু বলবে,আবার অনেকে দুটোই বলবে।
আরও পড়ুনপ:
ফিলিস্তিন স্বাধীনতা আন্দোলন কেন করছে? ফিলিস্তিন কি পরাধীন কোন রাষ্ট্র ছিলো? তাহলে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার প্রশ্ন কেন আসছে?
ইহুদিরা ফিলিস্তিনে জোর জবরদস্তি প্রবেশ করেছে,ফিলিস্তিনের ভূমি দখল করে নিজেদের একটা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে,এর পিছনে বৃটিশ এবং রথ চাইল্ড ফ্যামিলি মূল ভূমিকা রেখেছিলো।
এরপর বৃটিশরা ইহুদিদের দায়িত্ব আমেরিকার হাতে বুঝিয়ে দিয়ে নিজেরা কিছুটা দুরত্ব বজায় রেখে ইসরায়েলের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
এইসব কিছু স্বচ্ছ আয়নার মতো পরিস্কার হবার পরও মধ্যপ্রাচ্যের সকল রাষ্ট্র বাস্তবিক কোন পদক্ষেপ নেয় নি।ফিলিস্তিনের পক্ষে জোড়ালো কোন পদক্ষেপ আজও দেখা যায় নি।
ইরান প্রায়ই হুমকি দেয়।তুরস্কের এরদোয়ান ক্ষমতায় আসার পর সেও হুমকি দেয়,কিন্তু আসল কাজ কেউ করেনি। এর মূল কারন হলো,পুরো মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর নেত্রীত্ব নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম রাষ্ট্র গুলো একে অন্যের ভিতরে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত।সবাই চায় ক্ষমতা। সৌদির সাথে ইরানের দ্বন্দ্ব, তুরস্কের সাথে ইরানের দ্বন্দ্ব এই একই কারনে।
আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যেকে বিভক্ত করে রেখেছে।
ইরাকের সাথে কুয়েতের দ্বন্দ্ব কাজে লাগিয়ে ইরাক ধ্বংস, লিবিয়া ধ্বংস সিরিয়াকে ধ্বংস করেছে আমেরিকা ও ন্যাটো।
আমেরিকা সৌদির সাথে পেট্টোডলারের চুক্তি অভিশপ্ত চুক্তি।যা মুসলমানদের গোলামে পরিনত করেছে।
এতোগুলো বছর ধরে আমেরিকা মুসলমানদের রক্ত,সম্পদ লুট করার পরও মুসলমানদের ঘুম না ভাঙ্গার মূল কারণ হলো দাজ্জালের ফিতনা। হযরত মোহাম্মদ সা: বলে গিয়েছেন,দাজ্জালের ফিতনা হবে মুসলমানদের জন্য ভয়ংকর এক ফিতনা। যার থেকে বের হওয়া ভীষণ রকম কঠিন কাজ।
চোখের সামনে আমেরিকা ও ইসরায়েলের জঘন্য অপরাধ প্রত্যেক্ষ করার পরও মুসলিম সম্প্রদায় নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে।
এটাই বলে দেয়, যে দাজ্জালের ফিতনা কত ভয়ংকর।
গাজায় গনহত্যা শুরুর পর,মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বিভিন্নভাবে হুমকি ধমকি দিলেও বাস্তবিক কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। যেখানে প্রকাশ্যে আমেরিকা ইউরোপ ইসরায়েলকে অস্ত্র দিলেও মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশ প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিতে পারছে না। এর কারণ হলো ক্ষমতা হারানোর ভয়।
মধ্যপ্রাচ্যে সহ আফ্রিকা এশিয়ার অধিকাংশ মুসলিম রাষ্ট্র প্রধানরা বিশ্বাস করেন যে,তাদের ক্ষমতায় থাকা বা থাকা নির্ভর করছে আমেরিকার উপর।
অর্থাৎ আমরা মুসলিমরা সবসময় জেনে এসেছি,ক্ষমতার মালিক আল্লাহ। কিন্তু এখন সেই বিশ্বাস কোন মুসলিম রাষ্ট্রগুলো বিশ্বাস করেন বলে মনে হয় না,তাদের সকল কার্যক্রম দেখে মনে হয়,যে আমেরিকাই তাদের ক্ষমতার মালিক।
তারা আরো ভয় পায় আমেরিকার নিষেধাজ্ঞাকে।তারা বিশ্বাস করেন আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা দিলে তারা না খেয়ে মরে যাবে।
এই বিশ্বাস আমেরিকা নিজেই প্রতিষ্ঠা করেছে। সবাইকে ভয় দেখানোর জন্য।
আমেরিকা ইরান সহ বিভিন্ন আফ্রিকার রাষ্ট্রগুলোর উপর নিষেধাজ্ঞা দেবার পর সেইসব দেশ অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোথাও কোথাও অভাব দেখা দিয়েছে।
আর এই ভয়ে বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রগুলো বিশ্বাস করতে শুরু করেছে আমেরিকা তাদের রিযিক কেড়ে নিতে পারে।
এইভয়ে তারা আমেরিকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারছে না।
এইখানে লক্ষ করুন,দাজ্জাল সম্পর্কে যতটুকু জানা যায়,তাতে বলা আছে,দাজ্জাল নিজেকে ঈশ্বর রুপে দাবি করবে,রিযিক,মৃত্যু, জীবন দিতে পারবে। এখন বিভিন্ন রাষ্ট্রগুলোকে নিষেধাজ্ঞায় ফেলে তাদের অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে অভাবে ফেলে দিয়েছে আমেরিকা। এই থেকে অধিকাংশ মুসলিম রাষ্ট্র সহ বিশ্ব মেনে নিয়েছে,ক্ষমতা ও রিযিক আমেরিকার হাতে।
এটা আপনি স্বীকার করবেন না সরাসরি, কিন্তু বিশ্বাস আপনি করে ফেলেছেন।
গত নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের অভ্যান্তরে রাজনৈতিক বিষয়গুলোর দিকে নজর দিন।
এই দেশের অধিকাংশ মানুষ, বুদ্ধিজীবী,সাংবাদিক,রাজনৈতিক ব্যাক্তি আমেরিকার দিকে তাকিয়ে ছিলো, আমেরিকা কিছু একটা করবে। এই যে দৃঢ় বিশ্বাস মানুষের ভিতরে জন্মে ছিলো যে,আমেরিকা চাইলেই বাংলাদেশের ক্ষমতার পরিবর্তন করে ফেলতে পারবে।
এমন সময় বাংলাদেশের মুসলমানরা আমেরিকার সাগায্য প্রার্থনা করেছিলো,,যখন আমেরিকার সাহায্য নিয়ে ইসরায়েল গাজায় গনহত্যা চালিয়ে যাচ্ছিলো। অর্থাৎ চোখের সামনে প্রকাশ্যে গাজার মুসলমানদের মৃত্যু দেখেও বাংলাদেশের মুসলমানরা আমেরিকাকে নিজেদের ত্রাণ কর্তা মনে করে সাহায্যের জন্য দু হাত তুলে রেখেছিলো। এটাই কি প্রমাণ করে না যে,দাজ্জালের ফিতনা কতটা ভয়ংকর ভাবে মুসলমানদের ঘিরে ফেলেছে। শুধু মাত্র রাজনৈতিক স্বার্থে আমেরিকার মতো একজন প্রকাশ্য খুনিকে বন্ধু মনে করা কতটা ভয়ংকর।
এরপর সেই সময়কার টকশো গুলো মনযোগ দিয়ে শুনলে বিশ্বাস করতে হয় যে,আমেরিকা বাংলাদেশের রিযিক কেড়ে নিতে পারে। অর্থাৎ বাংলাদেশের একটি নিষেধাজ্ঞা পুরো বাংলাদেশের মানুষকে অভাবে ফেলে দিবে। হ্যা,দাজ্জালকে আল্লাহ সেই ক্ষমতা দিয়েছে,এটা মুসলমানদের জন্য পরিক্ষা।
মুসলিম সম্প্রদায় রিযিকের জন্য আল্লাহ না দাজ্জাল কার উপর নির্ভরশীল সেটার বড় পরিক্ষা।
বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায় দৃঢ ভাবে বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে,আমেরিকা চাইলে ক্ষমতা দিতে পারে,আবার নিতে পারে। এবং রিযিক দিতে পারে আবার কেড়ে নিতে পারে।
অনেকেই অস্বীকার করবে সরাসরী,,,,কিন্তু আচরণে সেটা বিশ্বাস করে সেটা উপরের আলোচনায় স্পষ্ট করেছি আমি।
এরপর দাজ্জালের আর একটা দিক হলো,দাজ্জালের হাতে জান্নাত এবং জাহান্নাম।
এটাও স্পষ্ট। দেখুন বিশ্বের অধিকাংশ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলো রাজনৈতিকভাবে বিশৃঙ্খলা অবস্থায় আছে। দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি সহ বিভিন্ন কারনে তাদের অর্থনীতি অনেকটা খারাপ।আবার আইনশৃংখলাও খুব বেশি ভালো নয়।
এর বাইরে যে মুসলমান রাষ্ট্রগুলো আছে,তাদের ইসলামি আইন অনেক কঠোর,যেমন আফগানিস্তানের মহীলাদের জন্য আফগান একটা জলন্ত জাহান্নাম মনে হয়।
অন্যদিকে ইউরোপ আমেরিকার দিকে তাকান,সব বিষয়ে স্বাধীন, অর্থনৈতিক ভাবেও স্বচ্ছল।
তাই অধিকাংশ মুসলমানদের কাছে নিজ দেশ জাহান্নাম মনে হয়,এটা দাজ্জালের একটি ষড়যন্ত্র যা অনেক বছর ধরে সে করে এসেছে।
বাংলাদেশের মানুষের কাছে প্রশ্ন করেন, আপনি বাংলাদেশ না ইউরোপ আনেরিকা কোন দেশে থাকতে চান? ৯৯% উত্তর দিবে বাংলাদেশ জাহান্নাম, ইউরোপ আমেরিকা জান্নাত।
তার কারন,আমাদের রাজনৈতিক অস্থিরতা,নিরাপত্তাহীনতা,সহ অনেক কারন।আর এইসব কারনের পিছনেই রয়েছে আমেরিকার হাত। এটা স্পষ্ট সবাই জানে তারপরও অনেকেই বিশ্বাস করবে না। বা স্বীকার করবে না।
অধিকাংশ মুসলমান রাষ্ট্রগুলোর মানুষ ইউরোপ আমেরিকায় যেতে চায়। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে জীবন বাজি রেখে যাচ্ছেও। নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও যাচ্ছে। এটাই প্রমাণ করে দাজ্জাল তার জান্নাতের দিকে মানুষকে আকৃষ্ট করতে পেরেছে।
দাজ্জাল খুব সুক্ষ্ম ভাবে মুসলমানদের রাষ্ট্রগুলোকে জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছে। আর যেসব মুসলমান রাষ্ট্র গুলো অর্থনৈতিক ভাবে স্বচ্ছল তাদের জনগনও একটু স্বাধীন লাইফ পালন করতে ইউরোপে যেতে চায়। ইউরোপে সব কিছুই হাতের মুঠোয়। যেমন জান্নাতের বেলায় আল্লাহ কোরআনে বলেছেন। সারাব,হুর,সবই ইউরোপে পাবেন। মুসলমানদের এই লোভ দাজ্জাল দেখিয়েছে। মুসলমানরা এখন সেইরকম একটা জীবনের খোঁজে ইউরোপ মুখি হচ্ছে।
পেয়েছেন দাজ্জালের পরিচয়?? আমেরিকাকে নিজের অজান্তে মুসলমানরা ঈশ্বর মেনে নিয়েছে। ক্ষমতার মালিক,রিযিকের মালিক,জান্নাতের মালিক হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে দিয়েছে মুসলমান সমাজ।
কোনভাবেই অস্বীকার করতে পারবেন না।
মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে রিবা বা সুদ সম্পর্কে বলেছেন-- যে রিবা বা সুদের সাথে জড়িত সবার বিরুদ্ধে আমি(আল্লাহ) যুদ্ধ ঘোষণা করলাম। অর্থ আল্লাহ সুদের সাথে জড়িত সবাইকে আল্লাহর শত্রু হিসাবে ঘোষণা করেছেন। এটা স্পষ্ট সত্য।
তারপরও আমরা কি করছি?
আমেরিকার খুব কাছের বন্ধু মানুষ, ড: ইউনুস যার হাত ধরে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে সুদ পৌছে গেছে,সেই ড: ইউনুসকে শুধু মাত্র রাজনৈতিক কারনে আমরা সম্মানিত করছি। তাকে নিয়ে প্রশংসা করছি। অথচ আল্লাহর একজন শত্রু হিসাবে তাকে ঘৃণা করা উচিত ছিলো।
দাজ্জালের ফেতনা কতটা ভয়ংকর বুঝতে পারছেন? চিরন্তন সত্য আল কুরাআনের কথাকে নির্দ্বিধায় ছুড়ে ফেলে দিতে আমাদের বুক কাঁপছে না।
আমরা কি আমেরিকাকে আল্লাহর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করছি না?? অস্বীকার করতে পারবেন? ফেরাউন কি দাজ্জাল রুপে ফিরে আসে নাই???
অপেক্ষা করবেন?? কবে আপনাদের তথাকথিত মাওলানারা এই বিষয়ে আপনাদের বলবে আর আপনারা সেইদিনের অপেক্ষায় আছেন?
আলেম সমাজের দিকে তাকালে মনে হয় না যে তারা নিজেরাও এই ফেতনায় জর্জরিত?
তারা এখনো পরীমনি,আর হিরো আলমের গীবত নিয়ে পড়ে আছেন। তাদের আচরনে ধর্ম গবেষণার কোন লক্ষণ খুজে পাওয়া যায় কি?
পরবর্তী লেখার জন্য অপেক্ষায় থাকুন।
Comments
Post a Comment